শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৫০ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

অপচয় থেকে বেঁচে থাকা

মুফতি শরিফুল আজম:
দুনিয়ার জীবনে চলতে গেলে সম্পদের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এটা আল্লাহর আরেক ব্যবস্থাপনা। তিনিই একে আমাদের এ জীবনের বাহ্যিক অবলম্বন বানিয়েছেন। এর সঠিক ও যথার্থ ব্যবহার যদি করা না হয় তাহলে এক দিকে যেমন তার দেওয়া নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা হবে, আবার আমাদের পার্থিব জীবনের অবলম্বনও নষ্ট হবে। কোরআনে কারিমে অপচয়কারীকে বলা হয়েছে শয়তানের ভাই। ‘আত্মীয়কে তার প্রাপ্য দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও; তবে কিছুতেই অপব্যয় করো না। সন্দেহ নেই, যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই, আর শয়তান তার প্রভুর প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ!’ সুরা বনী ইসরাঈল : ২৬-২৭

পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা যদি (আমার নেয়ামতের) কৃতজ্ঞতা আদায় করো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের আরও বাড়িয়ে দেব, আর যদি অকৃতজ্ঞ হও তাহলে (জেনে রেখো,) আমার শাস্তি অবশ্যই অত্যন্ত কঠিন।’ সুরা ইবরাহিম : ৭

কৃতজ্ঞতা আদায়ের জন্যে এ বিশ্বাস ধারণ করা যেমন জরুরি-আমার এ সম্পদ আমার আল্লাহ আমাকে দয়া করে দান করেছেন, তেমনি এর ব্যয়ক্ষেত্রও হতে হবে আল্লাহর বিধানমাফিক। অপ্রয়োজনে যেমন এ সম্পদ উড়ানো যাবে না, তেমনি অবৈধ কাজেও ব্যয় করা যাবে না। নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করতে হলে এ উভয় দিক অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে। অযথা ও অবৈধ খরচ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। জগতের যা কিছু সবই তো আল্লাহর। তিনিই প্রকৃত মালিক-ইমানদার যে কেউ এ বিশ্বাস পোষণ করে। অল্প সময়ের জন্যে তিনি কিছু সম্পদের বাহ্যিক মালিকানা আমাদের দান করেন। এ মালিকানা পরিবর্তনও হয়। এক হাত থেকে আরেক হাতে যায়। পথের ভিখারি রাজা হয়, রাজা সর্বস্ব হারিয়ে পথে নামে। চারপাশে এ বাস্তবতা দেখার পরও আমরা আমাদের মালিকানাধীন সম্পদকে প্রকৃত অর্থেই আমাদের সম্পদ মনে করে ভুল করি। এ থেকেই সৃষ্টি হয় অপচয়ের মানসিকতা-আমার টাকা আমি আমার ইচ্ছামতো খরচ করব, এতে কার কী বলার আছে! কিন্তু না, কোরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা সতর্ক করছেন আমাদের এ বলে, ‘তোমরা তাদের (তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের) আল্লাহর সম্পদ থেকে দান করো, যা তিনি তোমাদের দান করেছেন।’ সুরা নুর : ৩৩

এ আয়াতের প্রেক্ষাপট ও আলোচ্যবিষয় ভিন্ন। আমরা শুধু এতটুকু বলতে চাচ্ছি, আল্লাহ মানুষকে যে সম্পদ দান করেছেন, উক্ত আয়াতে তা আল্লাহর সম্পদ বলে আলোচিত হয়েছে। কথায় কথায় আমরাও বলি এসব আল্লাহর দান, আল্লাহর দেওয়া সম্পদ। কিন্তু শুধু মৌখিক স্বীকার নয়, বরং মুমিন হিসেবে এর প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস থাকাও অপরিহার্য।

হাদিসের ভাষ্য এ ব্যাপারে খুবই স্পষ্ট এবং কঠিন! হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি বলেন, ‘কিয়ামতের দিন এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হওয়ার আগে কোনো বান্দার পা-ই নড়বে না তার জীবন সে কীসে ব্যয় করেছে, তার ইলম অনুসারে সে কী আমল করেছে, তার সম্পদ সে কোত্থেকে উপার্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে আর তার শরীর কীসে নষ্ট করেছে?’ জামে তিরিমজি : ২৪১৭

নিজে কষ্ট করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শারীরিক আরাম বিসর্জন দিয়ে অর্থ উপার্জন করলেই তাতে নিজের যথেচ্ছ ব্যবহারের অধিকার সৃষ্টি হয় না। কাজেই এ সম্পদ একদিকে যেমন আল্লাহর নেয়ামত, আবার তা আমাদের হাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানতও। তাই এর যথাযথ ব্যবহার না করলে, অযথা অপ্রয়োজনে তা নষ্ট করলে, অপচয় করে বেড়ালে এ আমানতের খেয়ানতকারী হিসেবে জবাবদিহিতার মুখেও পড়তে হবে। অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় যেকোনো বিষয়ই ইসলাম অপছন্দ করে। অহেতুক কথা, অহেতুক কাজ, অহেতুক ব্যয়বর্জনীয় সবই। হাদিস শরিফের ব্যাপক নির্দেশনা, ‘ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্যের অনুসারী অনর্থক সব কিছু বর্জন করবে।’ জামে তিরমিজি : ২৩১৮

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION